পটুয়াখালীর দুমকিতে চাঁদাবাজিতে চ্যাম্পিয়ন বিএনপি নেতা সাইফুল মৃধা
আপডেট সময় :
২০২৫-০৯-১৮ ১৬:১৩:৩৪
পটুয়াখালীর দুমকিতে চাঁদাবাজিতে চ্যাম্পিয়ন বিএনপি নেতা সাইফুল মৃধা
শাহ কামাল সবুজঃ
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম মৃধা চাদাবাজি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। অনেকেই বলছেন চাদাবাজিতে সাইফুল মৃধা চ্যাম্পিয়ন হলেও দল তাকে রেখেছে এখনো বহাল তবিয়তে ।
উপজেলা প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রত্যন্ত এলাকা দাপটে বেড়িয়ে দখল ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে তাকে চাঁদা না দিয়ে কেউ টিকতে পেরেছেন। ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারি, ঠিকাদার-ব্যবসায়ি কাউকে বাদ দেন নি তিনি। গোপনে চাহিদা মাফিক চাঁদার টাকা পরিশোধ করে এলাকায় থাকতে হচ্ছে।
অভিযোগ আছে, নগদ বিশ লাখ টাকা চাঁদার বিনিময়ে শ্রীরামপুর ইউপি চেয়াম্যান উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি আজাহার আলী মৃধা ও তার ভাই ভাতিজারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আর দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানো পবিপ্রবির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ, সহপ্রকৌশলী ফজলুল হক ও মেডিকেল অফিসার ডা. নাসির উদ্দিনকে শারীরিক হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।
এছাড়াও, বেশ কয়েকজন আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ি, চাকুরিজীবির বাড়িঘরে মববাহিনী পাঠিয়ে হামলা, ভাংচুর লুঠপাট এমনকি শারীরিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। হেনস্থার শিকার ডা. নাসির উদ্দিন অবশ্য অভিযুক্তদের নামোল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন কিন্ত রহস্যজনক কারণে পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এসব ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম মৃধা বলেছেন, ‘অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট।’দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপি নেতা হয়েও আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার ও তার অনুগত নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে দখল ও চাঁদাবাজি করে হয়েছেন কোটিপতি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বিএনপির নীতিনির্ধারক।
১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। অথচ ওই সময়ে সাইফুল আলম মৃধা আওয়ামী লীগের একাংশের সঙ্গে যোগসাজস থাকায় তেমন কোনও নির্যাতনের শিকার হননি। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে বহু মামলা হলেও তার নামে নেই একটিও।
স্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় থানায় দালালি করা সাইফুল আলম মৃধা এখন শত কোটি টাকার মালিক। একসময় দিন এনে দিন খেয়ে চলতেন। বিএনপি সকল নির্বাচন বয়কট করলেও বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় তিনি জাতীয় ওলামা পার্টির নেতা মাওলানা রুহুল আমিনের সঙ্গে মিশে ঘনিষ্ঠজন হয়ে যান। তাকে (রুহুল আমীন) নির্বাচনে জিতিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে ৩০লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। রুহুল আমীনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার তার একাধিক ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
একই সময়, আ‘লীগ সমর্থিত প্রার্থী হারুন অর রশিদ হাওলাদারের কাছ থেকে এককালীন ১০লাখ ও দৈনিক ৩০হাজার টাকা নেন। অপর প্রার্থী কাওসার আমিন হাওলাদারের কাছ থেকেও ৪০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার গুণজন আছে। এর আগে, শ্রীরামপুর ইউপি নির্বাচনে তিনি কৃষকলীগ নেতা আজাহার আলী মৃধার পক্ষে সক্রিয় ভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। নির্বাচনে জয়ী হবার পর আজাহার মৃধার সাথে বিজয় মিলিলে অংশ নেন যার একাধিক ছবি ও ভিডিও ওই সময় ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাইফুল মৃধার।
তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুমকি উপজেলার বালুমহল, হাটবাজার-বাসস্ট্যান্ড টেম্পুস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি করেছেন সাইফুল আলম মৃধা। তিনি উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মাসুদ আলম মৃধা,চাচাতোভাই যুবদল নেতা মিজান মৃধা, ভাতিজা শামিম,ভাতিজা দুর্জয়, সহ ৮/১০জনের বাহিনী তৈরী করে গড়ে তুলেছেন দখলদার বাহিনী।
তিনি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের প্যাডে বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন ও পবিপ্রবি‘র কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজও বাগিয়ে নিয়েছেন। ২৪আগস্ট পরবর্তি কয়েকদিনের ব্যবধানে উপজেলাটি হয়ে ওঠে ত্রাসের নগরী। সাইফুলের দখলদারি ও বেপরোয়া কর্মকান্ডে বিতর্কিত হয়ে ওঠে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি। দল সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্মায়।
বিএনপির জেলা ও কেন্দ্রীয় কমান্ডে দুমকির রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে যুবদল নেতা জিএম ওলিউর রহমান, রিপন শরীফসহ বেশ কয়েকজনকে দল বহিষ্কার করলেও বহাল তবিয়তে আছেন সাইফুল আলম মৃধা। তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির দুজন নেতা বলেছেন, ‘সরকার পতনের পর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষত: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজি করে অস্থির করে তুলেছেন তিনি। পবিপ্রবিতে আ‘লীগ সমর্থিত কর্মকর্তাদের কেউ রেহাই পায়নি তার হাত থেকে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই একদেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাইফুল বাহিনী। অথচ বহিষ্কার হলেন জিএম অলিসহ বেশ কয়েকজন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আমাদের আবেদন, বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করে সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কারণ ঘটনার মূলেই আছেন সাইফুল।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুমকি উপজেলা শহরের বাসিন্দা এবং বিএনপির কর্মী বলেন, সাইফুল আলম মৃধা বিগত গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিভিন্নভাবে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। বিশেষ করে বালু ব্যবসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদারি কাজ বাগানো ছিল তার আয়ের বড় মাধ্যম। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিজের বাহিনী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বাইরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এখনও আগের মতো চলছে তার এই বাণিজ্য।’একই অভিযোগ করে উপজেলার লেবুখালী এলাকার আরেক বিএনপি নেতা বলেন, ‘নিজস্ব বাহিনী দিয়ে ৫আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হানাদিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করেছেন সাইফুল মৃধা। সবগুলো হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড, বালুমহল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদারী ব্যবসা নিজের দখলে নিয়েছেন।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম মৃধা বলেন, ‘আমার জীবনে কোনও দুর্নীতি কিংবা অপরাধ নেই। আমি চাঁদাবাজি কিংবা কোনও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নই। ৫ আগস্টের পর আমার দলের অনেকে দখল এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে জডিত হয়ে পড়েছিলেন। তাদের আমি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি।
এখন দুমকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিয়ে নিজের লোকজন দিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা প্রবাগান্ডা ছরাচ্ছে। তবে এসব কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট।।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স